🏀 আলসার কি?.
গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রধান কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া। হেলিকো ব্যাকটার পাইলোরি নামে এক প্রকার ব্যকটেরিয়া যদি আমাদের পাকস্থলীতে প্রদাহ বা সংক্রমণ ঘটায় তাহলে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয় বা গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়।খাবার হজমের জন্য শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী পাকস্থলীতে প্রতিনিয়ত এসিড ( হাইড্রোক্লোরিক এসিড) নিঃসরন হয়।এই এসিড খুবই তীব্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। তবে তা পাকস্থলী ও ডিওডেনামের(পাকস্থলী থেকে পরবর্তী সরু অংশ যার মধ্য দিয়ে খাবার যায়) কোন ক্ষতি করতে পারে না। কারণ পাকস্থলী ও ডিওডেনামের অভ্যন্তরে মিউকাস মেমব্রেন নামক একটি বিশেষ স্তর থাকে যা এসিড দ্বারা ক্ষত সৃষ্টি হওয়া রোধ করে। কোন কারণবশত মিউকাস মেমব্রেনের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাকস্থলী বা ডিওডেনামে ক্ষতের সৃষ্টি হয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় আলসার বলা হয়ে থাকে। আলসার সৃষ্টির কারণ হিসেবে নিম্নলিখিত দুইটি কারণ কে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমনঃ
Pylori ব্যাকটেরিয়াঃ অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে H. Pylori নামক ব্যাকটেরিয়ার ঘাটতির কারণে আলসার হয়ে থাকে। সাধারণত পানি ও খাবারের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যাথা নাশক ঔষধঃ দীর্ঘদিন যাবত ব্যথা নাশক ওষুধ সেবনের ফলে মিউকাস মেমব্রেনের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আনসার সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও আরো কতিপয় বিষয়কে আনসারের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমনঃ
* ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার
* ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস
* অতিরিক্ত মানসিক চাপ ইত্যাদি আনসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আলসার কত প্রকারঃ পেটের কোন স্থানে আলসার হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে নামকরণ করা হয়েছে। যেমনঃ
১।গ্যাস্ট্রিক আলসারঃ গ্যাস্ট্রিক শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয় পাকস্থলীকে আর তাই গ্যাস্ট্রিক আলসার মানে হলো পাকস্থলীতে আলসার হওয়া।
২।ডিওডেনাল আলসারঃ পাকস্থলী থেকে পরবর্তী সরু নালীর মত অংশটির নাম ডিওডেনাম আর এই স্থানে আলসার হলে তাকে ডিওডেনাল আলসার বলা হয়। ।
এছাড়াও খাদ্যনালী বা ইসোফেগাসে (Esophagus) আলসার হলে তাকে ইসোফেজিয়াল আলসার নামে অভিহিত করা হয়। তবে সব ধরনের আলসার কে একটি নামে পেপটিক আলসার বলা হয় এবং পরবর্তী সকল আলোচনায় পেপটিক আলসার বোঝানো হয়েছে।
আলসারেটিভ কোলাইটিসঃ
আমাদের বৃহদন্ত্রকে কোলন বলা হয়। আর এই কোলনের ভেতরে যদি কোনো ক্ষতি হয়, যেমন জ্বালা, ফুলে যাওয়া, ঘা হওয়া, তখন তাকে বলে কোলাইটিস। আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে পেটের প্রদাহজনিত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এর ফলে বৃহদন্ত্র ও কোলনে প্রদাহ ও ঘা হয়, যা রোগীর পেটে মর্মান্তিক ব্যথার সৃষ্টি করে। ছোট ছোট আলসার বা ঘাগুলো পুরো কোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আলসারগুলো একে অন্যের সঙ্গে আটকে থাকে। এই রোগ জিনগত কারণে বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে। আলসারেটিভ কোলাইটিস ঠিক কাদের হয় তার কারণ সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে মামাতো, চাচাতো, খালাতো ও ফুফাতো ভাইবোনদের সন্তানদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন কোলনের অন্ত্রগাত্রের আবরণ যদি দুর্বল হয় তবে এ রোগ হতে পারে।
এটার বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত হয় কোলনের ঝিল্লি এবং মলদ্বারের প্রদাহ দ্বারা, যেগুলি একত্রে বৃহদন্ত্র গঠন করে। এটা মলদ্বার এবং কোলনের নীচের অংশে শুরু হয়। এটা একটা জীবনব্যাপী দশা যা চিকিৎসা করা এবং সামলানো যেতে পারে কিন্তু একেবারে নিরাময় করা যায়না।
Mmm
আলসারেটিভ কোলাইটিস হচ্ছে ইনফ্ল্যামেটোরি বাওয়েল ডিজিজ-এর (আইবিডি) একটা রূপ যা ইরিটেব্ল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা ক্রোনজ ডিজিজ-এর সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।
script type="text/javascript"> atOptions = { 'key' : '6b35d96545c8ed9ae12d39890c4cd11d', 'format' : 'iframe', 'height' : 60, 'width' : 468, 'params' : {} };
/p>ক্রোনজ ডিজিজ পরিপাক নালীর যেকোন অংশকে আক্রমণ করতে পারে কিন্তু আলসারেটিভ কোলাইটিস প্রধানতঃ বৃহদন্ত্রের নীচের অংশ (মলদ্বার) আক্রমণ করে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ণ কোলনকে আক্রমণ করতে পারে।
আলসারের লক্ষণঃ
আনসারের সবচেয়ে কমন লক্ষণ হলো বুকে জ্বালাপোড়া ও পেটে ব্যথা বোধ হওয়া । ব্যথা ও জ্বালাপোড়া সাধারণত খালি পেটে ও রাতের বেলায় বেশি হয়। এছাড়াও আরোও অন্যান্য লক্ষণ থাকতে পারে তা হলঃ
#বমি বমি ভাব
#পেট ভরা মনে হয়
#খাবারের প্রতি অনীহা দেখা যায়।
প্রাথমিক অবস্থায় এসিড নিবারনের ঔষধের মাধ্যমে সমাধান হলে ভালো। তবে যদি এ সকল লক্ষণ বারবার ফিরে আসে জটিল আকার ধারণ করে বমি বমি ভাব , বমির সাথে রক্ত যাওয়া, কালো পায়খানা হওয়াও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে শরীরের ওজন কমতে থাকা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে । পাকস্থলী থেকে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ কমানো এবং এসিডের তীব্রতা কামানোর জন্য এন্টাসিড ,অ্যাসিড ব্লকার , বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহনে ও PPI (Proton pump inhibitor) এসকল ঔষধ সেবনে সতর্ক থাকতে হবে।
অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ফলে মিউকাস মেমব্রেনের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আলসার হতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আলসারের সুন্দর ও সহজ সমাধান রয়েছে। কোন প্রকার অপারেশন ছাড়াই হোমিওপ্যাথি ঔষধ সেবনের মাধ্যমে সহজে ক্ষত নিরাময় হয়, ও আলসার থেকে মানুষ মুক্তি পায়। অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ফিজিশিয়ান এর পরামর্শ মতো ঔষধ সেবন করুন সুস্থ থাকুন। ডাঃআলীনুর রহমান (হাবীব) ডিএইসএমএস(বিএইসবি),এইসএসডিপি
প্রচার সম্পাদক, ওয়েলফেয়ার হোমিওপ্যাথিক একাডেমি।
0 Comments